বাংলাদেশের ওপর থাকা ভ্রমণ সতর্কতা শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ জুলাই মাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সতর্কতা লেভেল ফোরে (চতুর্থ ধাপ) ছিল। এখন তা কমিয়ে লেভেল থ্রিতে (তৃতীয় ধাপ) নামিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়েছে।

দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নাগরিকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, অস্থিরতা, অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। কিছু এলাকায় ঝুঁকি বেড়েছে। বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সমাবেশ এড়িয়ে চলুন; শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। ব্রেকিং ইভেন্টগুলোর জন্য স্থানীয় মিডিয়ায় নজর রাখুন।

এতে বলা হয়, কোনো ডাকাতির প্রচেষ্টাকে শারীরিকভাবে প্রতিহত করবেন না। একটি নিরাপদ এলাকায় যান এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধমূলক ঘটনা রিপোর্ট করুন। কনস্যুলার পরিষেবাগুলোর আপডেটসহ সতর্কবার্তা পেতে স্মার্ট ট্র্যাভেলার এনরোলমেন্ট প্রোগ্রামে নথিভুক্ত করুন।

নির্দেশনায় বলা হয়, ফেসবুক ও এক্সে স্টেট ডিপার্টমেন্ট অনুসরণ করুন। বাংলাদেশের জন্য কান্ট্রি সিকিউরিটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করুন। জরুরি পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখুন। অনুগ্রহ করে ট্রাভেলার্স চেকলিস্ট পর্যালোচনা করুন।যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অপরাধ, সন্ত্রাস, অপহরণ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোতে ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, সন্ত্রাসবাদী আক্রমণগুলো সামান্য বা কোনো সতর্কতা ছাড়াই ঘটতে পারে। পর্যটন স্থান, পরিবহন কেন্দ্র, বাজার/শপিং মল, রেস্তোরাঁ, উপাসনালয়, স্কুল ক্যাম্পাস এবং সরকারি জায়গাগুলোতে হামলা হতে পারে।

এর আগে এই সতর্কতা লেভেল ফোরে (চতুর্থ ধাপ) ছিল, এখন তা কমিয়ে লেভেল থ্রিতে (তৃতীয় ধাপ) নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে এখন মার্কিন নাগরিকরা চাইলে কিছু পরামর্শ মেনে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের সবধরনের জমায়েত বিশেষ করে রাজনৈতিক জমায়েতগুলো এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।

তবে এখনও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে মার্কিন নাগরিকদের। এক্ষেত্রে সতর্কতার লেভেল ফোরেই আছে।

গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ভ্রমণে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্রমণ সংক্রান্ত একটি এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা তালিকায় বাংলাদেশকে লেভেল-ফোর (ভ্রমণ নিষিদ্ধ) অবস্থানে দেখা গেছে।

এর আগে, ৪ সেপ্টেম্বর সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগ‌রিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা এখনও লাল তালিকায় রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশসহ রয়েছে ২১টি দেশ।

ওই পোস্টে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ ২১টি দেশকে লাল তালিকাভুক্ত করে চতুর্থ ধাপের ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভ্রমণ সতর্কতা। মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব দেশ ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এই তালিকায় বাংলাদেশের সাথে ছিল ছাড়াও অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, বেলারুশ, বুরনিকা ফাসো, মিয়ানমার, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, হাইতি, ইরান, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, মালি, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।

এর আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ নিয়ে চতুর্থ ধাপের ভ্রমণ সতর্কতা জারি করার কথা জানায় মার্কিন দূতাবাস। সেখানে বলা হয়েছিল, বেসামরিক অস্থিরতা, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির কারণে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়।